হজ্জের তাৎপর্য
ইসলামি ইবাদতসমূহের মধ্যে হজ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। এক হাদিস অনুযায়ী হজ্জকে বরং
সর্বোত্তম ইবাদত বলা হয়েছে।
• এহরামের কাপড় গায়ে জড়িয়ে আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে হজ্জের সফরে রওয়ানা হওয়া কাফন
পরে আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে আখেরাতের পথে রওয়ানা হওয়াকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
• হজ্জের সফরে পাথেয় সঙ্গে নেয়া আখেরাতের সফরে পাথেয় সঙ্গে নেয়ার
প্রয়োজনয়ীতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
• এহরাম পরিধান করে পুত-পবিত্র হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়ার জন্য ‘লাববাইক’ বলা
সমস্ত গুনাহ-পাপ থেকে পবিত্র হয়ে পরকালে আল্লাহর কাছে হাজিরা দেয়ার প্রয়োজনীয়তাকে
স্মরণ করিয়ে দেয়। আরো স্মরণ করিয়ে দেয় যে এহরামের কাপড়ের মতো স্বচ্ছ-সাদা হৃদয়
নিয়েই আল্লাহর দরবারে যেতে হবে।
• লাববাইকা আল্লাহুম্মা লাববাইক’ বলে বান্দা হজ্জ বিষয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে
আল্লাহর যে কোনো ডাকে সাড়া দেয়ার ব্যাপারে সদা প্রস্ত্তত থাকার কথা ঘোষণা দেয়।
এবং বাধাবিঘ্ন বিপদ-আপদ কষ্ট-যাতনা পেরিয়ে যে কোনো গন্তব্যে পৌঁছতে সে এক পায়ে
দাঁড়িয়ে আছে, এ কথা ব্যক্ত করে।
• এহরাম অবস্থায় সকল বিধি-নিষেধ মেনে চলা স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে যে মুমিনের জীবন
বল্গাহীন নয়। মুমিনের জীবন আল্লাহর রশিতে বাঁধা। আল্লাহ যেদিকে টান দেন সে সেদিকে
যেতে প্রস্ত্তত। এমনকী যদি তিনি স্বাভাবিক পোশাক- আশাক থেকে বারণ করেন, প্রসাধনী
আতর স্নো ব্যবহার, স্বামী-স্ত্রীর সাথে বিনোদন নিষেধ করে দেন, তবে সে তৎক্ষণাৎ বিরত
হয়ে যায় এসব থেকে। আল্লাহর ইচ্ছার সামনে বৈধ এমনকী অতি প্রয়োজনীয় জিনিসকেও
ছেড়ে দিতে সে ইতস্তত বোধ ্তত বোধ করে না বিন্দুমাত্র।বায়তুল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে মুমিন নিরাপত্তা অনুভব করে। কেননা বায়তুল্লাহকে
নিরাপত্তার নিদর্শন হিসেবে স্থাপন করেছেন আল্লাহ তাআলা।সফরের কষ্ট-যাতনা সহ্য করে বায়তুল্লাহর আশ্রয়ে গিয়ে মুমিন অনুভব করে এক অকল্পিত
নিরাপত্তা। তদ্রূপভাবে শিরকমুক্ত ঈমানি জীবযাপনের দীর্ঘ চেষ্টা-সাধনার পর মুমিন
আল্লাহর কাছে গিয়ে যে নিরাপত্তা পাবে তার প্রাথমিক উদাহরণ এটি।
হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শ মুমিনের হৃদয়ে সুন্নতের তাজিম-সম্মান বিষয়ে চেতনা
সৃষ্টি করে। কেননা নিছক পাথরকে চুম্বন করার মাহাত্ব কী তা আমাদের বুঝের আওতার
বাইরে। তবুও আমরা চুম্বন করি, যেহেতু রাসূলুল্লাহ (ﷺ)করেছেন। বুঝে আসুক না আসুক
কেবল রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর অনুসরণের জন্যই আমরা চুম্বন করে থাকি হাজরে আসওয়াদ। এ
চুম্বন বিনা-শর্তে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর আনুগত্যে নিজেকে আরোপিত করার একটি আলামত। ওমর
(রাঃ) হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করার পূর্বে বলেছেন, ‘আমি জানি নিশ্চয়ই তুমি একটি
পাথর। ক্ষতি-উপকার কোনোটারই তোমার ক্ষমতা নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে চুম্বন করতে না
দেখলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।তাওয়াফ আল্লাহ-কেন্দ্রিক জীবনের নিরন্তর সাধনাকে বুঝায়। অর্থাৎ একজন মুমিনের জীবন
আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এক আল্লাহকে সকল কাজের কেন্দ্র বানিয়ে
যাপিত হয় মুমিনের সমগ্র জীবন। বায়তুল্লাহর চার পাশে ঘোরা আল্লাহর মহান নিদর্শনের
চার পাশে ঘোরা। তাওহীদের আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের চার পাশে ঘোরা। তাওহীদনির্ভর
জীবনযাপনের গভীর অঙ্গীকার ব্যক্ত করা। আর সাত চক্কর চূড়ান্ত পর্যায়কে বুঝায়। অর্থাৎ
মুমিন তার জীবনের একাংশ তাওহীদের চার পাশে ঘূর্ণায়মান রাখবে আর বাকি অংশ ঘোরাবে
অন্য মেরুকে কেন্দ্র করে, এরূপ নয়। মুমিনের শরীর ও আত্মা, অন্তর-বহির সমগ্রটাই ঘোরে
একমাত্র আল্লাহকে কেন্দ্র করে যা পবিত্র কুরআনে ‘পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো
বলে ব্যক্ত করা হয়েছে।