হজ
মানসিক প্রস্তুতি

প্রথমে আপনার নিয়ত পরিশুদ্ধ করুন। কেননা নিয়তের ওপরই আমল নির্ভরশীল। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই নিয়তের ওপর আমল নির্ভরশীল তাই লোক-দেখানো, হজ্জ করলে সমাজে মান-মর্যাদা বাড়বে, নামের সাথে আলহাজ্ব লেখা যাবে, নির্বাচনি লড়াইয়ে জনতাকে অধিক পরিমাণে প্রভাবিত করা যাবে ইত্যাদি ভাবনা থেকে নিজেকে পবিত্র করুন। এসব মনোবৃত্তিকে ‘রিয়া’ বলা হয়। রিয়া মারাত্মক অন্যায় যাকে হাদিসে ছোট শিরক বলা হয়েছে।ছোট শিরক বুকে ধারণ করে হজ্জ করলে হজ্জ কবুল হবে না কথাটি ভালোভাবে স্মরণ রাখুন। তাই রিয়া থেকে মুক্ত থাকুন ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন তিনি যেন রিয়া-মুক্ত হজ্জ পালনের তাওফিক দান করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)নিজেও এরূপ প্রার্থনা করতেন। এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেছেন-যে দিন থেকে হজ্জ পালনের নিয়ত করেছেন সেদিন থেকেই মনে করবেন যে আপনার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। ইতোপূর্বে যদি আপনি আল্লাহর হক নষ্ট করে থাকেন, সালাত, সিয়াম যাকাত আদায় ইত্যাদির কোনোটিতে অবজ্ঞা-অনীহা-অমনোযোগ দেখিয়ে থাকেন তাহলে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসুন। হক্কুল্লাহ বিষয়ে সকল জানা-অজানা গুনাহ-পাপ থেকে মুক্তি কামনা করে আল্লাহর দরবারে আহাজারি করুন। কাঁদুন। মুক্তিকামনা করুন হৃদয় উজাড় করে, আল্লাহ তালার সীমাহীন রহমত ও ক্ষমাশীল হওয়ার কথা খেয়াল রেখে। এখন থেকে হক্কুল্লাহ বা আল্লাহর অধিকারের আওতাভুক্ত প্রতিটি বিষয়ই অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে আদায় করুন। বিগত পাপ-অন্যায়ের জন্য তাওবা করুন। তাওবার নিয়ম হল- ক. সকল প্রকার গুনাহ-পাপ থেকে ফিরে আসা, ও তা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা। খ. পূর্বের সকল পাপ-অন্যায়ের প্রতি অনুশোচনা ব্যক্ত করা। গ. এমন অপরাধে ভবিষ্যতে আর কখনো জড়াবেন না এমর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া।হজ্জ পালন অবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ, বাকবিতন্ডা নিষেধতাই পূর্ব থেকেই আপনার মধ্যে যাতে সহিষ্ণু মেজাজ গড়ে উঠে সে ব্যাপারে মানসিকভাবে।আল্লাহর জিকির হজ্জের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সূরা বাকারার ১৯৮, ২০০, ২০৩ আয়াতে হজে জিকিরের বিষয়ে উল্লেখ হয়েছে। হজ্জের তাওয়াফ-সাঈ কঙ্কর মারার বিধান আল্লাহর জিকির বা স্মরণের উদ্দেশে রাখা হয়েছে বলে হাদিসে এসেছে[5] সে হিসেবে হজ্জের পুরো সময়টা যেন আল্লাহর জিকির ও স্মরণে কাটে, আল্লাহর মেহমানদারিতে থাকা অবস্থায় আল্লাহর ধ্যান, আল্লাহর স্মরণ সদাসর্বদা নিজের হৃদয়কে আন্দোলিত করে রাখে সে জন্য শুরু থেকেই মানসিকভাবে প্রস্ত্ততি নিতে হবে ও চর্চা অনুশীলন করতে হবে। অন্যথায় হঠাৎ করে আল্লাহর জিকির ও স্মরণে নিজেকে আরোপিত করা সম্ভব নয়। এ কারণে হজ্জ পালনের সময় অধিকাংশ হাজিদেরকে জিকির থেকে গাফেল থাকতে দেখা যায়। ঘরসংসার, স্ত্রী-সন্তান, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে দেখা যায় অনেককে। তাই এ বিষয়ে আগে থেকেই মনোযোগী হোন, ও তাসবীহ-তাহলীল অভ্যাস গড়ে তুলুন।হজে বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ সমগ্র পৃথিবী থেকে এসে একত্রিত হয়। পুরুষের পাশে নারীদের সমাগম ঘটে সমানভাবে। অধিকাংশ নারী উন্মুক্ত চেহারায় চলাচল করেন, সালাত আদায় করতে আসেন। এদের অনেকেরই রয়েছে নজর-কাড়া রূপ-লাবণ্য। এ ক্ষেত্রে আপনার দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পূর্ব থেকেই মানসিকভাবে প্রস্ত্ততি নিতে হবে। অন্যথায় ছোয়াবের পরিবর্তে গুনাহ করে হজ্জ থেকে ফিরে আসবেন।স্বামী-স্ত্রী একসাথে হজ্জ করতে গেলে হজ্জের দিন গুলোতে স্বামী-স্ত্রী সুলভ মেলা-মেশা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে হয়। তাই এ বিষয়ে উভয়ে খুব কঠিন সিদ্ধান্ত নিন এবং মানসিক প্রস্ত্ততি গ্রহণ করুন। অন্যথায় গোটা হজ্জই নষ্ট হয়ে যাবে এ কথা মনে রাখবেন।