হজ
হজ ও ওমরাহ আবশ্যক হওয়ার শর্ত

প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া - অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চা-যদিও সে বুঝার মত বা ভালো-মন্দ পার্থক্য করার মত জ্ঞান রাখে- তার জন্য হজ-ওমরাহ আবশ্যক নয়। কেননা তার জ্ঞান ও শক্তি এখনো পূর্ণতা পায়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ :- وَفِيهِ - وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَشِبَّ. وَفِى رِوَايَةِ: وَعَنِ الصَّبِىِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ». ‘তিনজন থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে : (তন্মধ্যে) শিশু থেকে, যতক্ষণ না সে যৌবনে উপনীত হয়।’ [তিরমিযী : ৩২৪১]  অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘এবং শিশু থেকে যতক্ষণ না সে বালেগ হয়।’ [আবু দাউদ : ৩০৪৪] তবে বাচ্চারা যদি হজ বা ওমরাহ আদায় করে, তবে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে। ইবন আব্বাস রা. বলেন,  ‘একজন মহিলা একটি শিশুকে উঁচু ধরে জানতে চাইল, ‘হে আল্লাহর রাসূল, এর জন্য কি হজ রয়েছে?’ তিনি বললেন, «نَعَمْ ، وَلكِ أجْر». ‘হ্যাঁ, আর সওয়াব হবে তোমার।’ [মুসলিম : ২/৪৭৯ ] প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো শিশুও ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ সব বিষয় থেকে দূরে থাকবে। তবে তার ইচ্ছাকৃত ভুলগুলোকে অনিচ্ছাকৃত ভুল হিসেবে গণ্য করা হবে। ভুলের কারণে তার ওপর কিংবা তার অভিভাবকের ওপর ফিদ্য়া ওয়াজিব হবে না। এ-হজ তার জন্য নফল হবে। সামর্থবান হলে বালেগ হওয়ার পর তাকে ফরয হজ করতে হবে।  কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, أَيُّما صَبِيٍّ حَجَّ ثُمَّ بَلَغَ الْحِنْثَ فَعَلَيْهِ أَنْ يَحُجَّ حِجَّةٌ أُخْرَى ‘কোন বাচ্চা যদি হজ করে, অতঃপর সে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়, তবে পরবর্তীকালে সামর্থবান হলে তাকে আরেকটি হজ করতে হবে।’ [আল-আওসাত : ২৫৭২ ] অনেক ফিকহবিদ বলেন, ‘শিশু যদি বালেগ হওয়ার আগে ইহরাম বাঁধে এবং ইহরাম অবস্থায় বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে আরাফায় অবস্থান করে, তাহলে তার ফরয হজ আদায় হয়ে যাবে।’ সামর্থবান হওয়া - আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧ ﴾ [ال عمران: ٩٧] ‘এবং সামর্থবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বাইতুল্লাহ্‌র হজ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।’ [আলে ইমরান : ৯৭] আপনার কোন ঋণ থেকে থাকলে হজ করার পূর্বেই তা পরিশোধ করে নিন। যাকাত, কাফফারা ও মানত ইত্যাদি পরিশোধ না করে থাকলে তাও আদায় করে নিন। কেননা এগুলো আল্লাহর ঋণ। মানুষের ঋণও পরিশোধ করে নিন। মনে রাখবেন, যাবতীয় ঋণ পরিশোধ ও হজের সফরকালীন সময়ে পরিবারের ব্যয় মেটানোর ব্যবস্থা করে হজের কার্যাদি সম্পন্ন করার মত অর্থ-কড়ি বা সামর্থ যদি আপনার থাকে তাহলে হজে যেতে আপনি আর্থিকভাবে সামর্থবান। আপনার ওপর হজ ফরয। তবে আপনি যদি এমন ধরনের বড় ব্যবসায়ী হন, বিভিন্ন প্রয়োজনে যার বড় ধরনের ঋণ করতেই হয়, তাহলে আপনার গোটা ঋণের ব্যাপারে একটা আলাদা অসিয়ত নামা তৈরি করুন। আপনার ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী যারা হবেন তাদেরকে এ বিষয়ে দায়িত্ব অর্পণ করে যান। আপনি হালাল রিযিক উপার্জন করে হজে যাওয়ার মতো টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করুন। কখনো হারাম টাকায় হজ করার পরিকল্পনা করবেন না। যদি এমন হয় যে, আপনার সমগ্র সম্পদই হারাম, তাহলে আপনি তওবা করুন। হারাম পথ বর্জন করে হালাল পথে সম্পদ উপার্জন শুরু করুন। আর কোনদিন হারাম পথে যাবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করুন। আপনি যদি দৈহিকভাবে সুস্থ হোন। অর্থাৎ শারীরিক দুর্বলতা, বার্ধক্য বা দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে হজের সফর বা হজের রুকন আদায় করতে অক্ষম না হোন, তাহলে আপনি হজে যেতে শারীরিকভাবে সামর্থবান বিবেচিত হবেন। আপনি যদি আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থবান হোন, তাহলে আপনার ওপর সশরীরে হজ করা ফরয। আর যদি আর্থিকভাবে সামর্থবান কিন্তু শারীরিকভাবে সামর্থবান না হোন, তাহলে আপনি প্রতিনিধি নির্ধারণ করবেন, যিনি আপনার পক্ষ থেকে হজ ও ওমরাহ আদায় করবেন। ‘বদলী হজ’ অধ্যায়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা আসছে।