হজের সফরে মহিলার সাথে মাহরাম পুরুষ থাকা
ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আহমদ রহ.-এর মতে সফরের দূরত্বে গিয়ে হজ করতে হলে মাহরাম
সাথে থাকা শর্ত। যে মহিলার মাহরাম নেই তার ওপর হজ ফরয নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لاَ تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ إِلاَّ مَعَ ذِي مَحْرَمٍ ، وَلاَ يَدْخُلُ عَلَيْهَا
رَجُلٌ إِلاَّ وَمَعَهَا مَحْرَمٌ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي أُرِيدُ
أَنْ أَخْرُجَ فِي جَيْشِ كَذَا وَكَذَا وَامْرَأَتِي تُرِيدُ الْحَجَّ فَقَالَ
اخْرُجْ مَعَهَا
‘কোন মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া সফর না করে আর কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সাথে মাহরাম
থাকা ছাড়া তার কাছে না যায়।’এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি অমুক
অমুক যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা করেছি। এদিকে আমার স্ত্রী হজের ইচ্ছা করেছে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে যাও।’
[বুখারী : ১৮৬২ ]
ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لا تَحُجَّنَّ امْرَأةٌ إِلا وَمَعَهَا ذُوْ مَحْرَمٍ
‘কোন মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া কখনো হজ না করে।’
[দারা কুতনী : ২/৩০ ]
মহিলার মাহরাম -
যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া স্থায়ীভাবে হারাম, তারাই শরীয়তের পরিভাষায়
মাহরাম। মাহরাম কয়েক ধরনের হয়ে থাকে।
বংশগত মাহরাম, বংশগত মাহরাম মোট সাত প্রকার -
মহিলার পিতৃকূল : যেমন পিতা, দাদা, নানা, পর-দাদা, পর-নানা এবং তদুর্ধ পিতৃপুরুষ।
মহিলার ছেলে-সন্তান : যেমন পুত্র, পুত্রের পুত্র, কন্যার পুত্র ও তাদের অধস্তন
পুরুষ।
মহিলার ভাই : সহোদর তথা আপন ভাই বা বৈপিত্রেয় ভাই অথবা বৈমাত্রেয় ভাই।
মহিলার চাচা : আপন চাচা বা বৈপিত্রেয় চাচা অথবা বৈমাত্রেয় চাচা। অথবা পিতা বা মাতার
চাচা।
মহিলার মামা : আপন মামা বা বৈপিত্রেয় মামা অথবা বৈমাত্রেয় মামা। অথবা পিতা বা মাতার
মামা।
মহিলার ভাইয়ের ছেলে : ভাইয়ের ছেলে, ভাইয়ের ছেলের ছেলে, ভাইয়ের ছেলের কন্যাদের ছেলে
ও তাদের অধস্তন পুরুষ।
মহিলার বোনের ছেলে : বোনের ছেলে, বোনের ছেলের ছেলে, বোনের ছেলের কন্যাদের ছেলে ও
তাদের অধস্তন পুরুষ।
দুগ্ধপানজনিত মাহরাম -
দুগ্ধপানজনিত মাহরামও বংশগত মাহরামের ন্যায় সাত প্রকার, যার বিবরণ ওপরে উল্লেখ করা
হয়েছে।
বৈবাহিক সম্পর্কজাত মাহরাম -
বৈবাহিক সম্পর্কজাত মাহরাম পাঁচ ধরনের :
• স্বামী।
• স্বামীর পুত্র, তার পুত্রের পুত্র, কন্যার পুত্র এবং তাদের অধস্তন পুরুষ।
• স্বামীর পিতা, দাদা, নানা এবং তদূর্ধ্ব পুরুষ।
• কন্যার স্বামী, পুত্রসন্তানের মেয়ের স্বামী, কন্যাসন্তানের মেয়ের স্বামী এবং
তাদের অধস্তন কন্যাদের স্বামী।
• মায়ের স্বামী এবং দাদী বা নানীর স্বামী।
মাহরাম বিষয়ক শর্ত -
মাহরাম পুরুষ অবশ্যই মুসলিম, বিবেকবান ও প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। কেননা, মাহরাম সাথে
নেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে হজের কার্যাদি সম্পাদনে মহিলার সার্বিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা
নিশ্চিত করা। মাহরাম যদি অমুসলিম হয় অথবা ভালো-মন্দ বিচার-ক্ষমতা না রাখে অথবা বালক
কিংবা শিশু হয় কিংবা পাগল হয়, তবে তার দ্বারা মহিলার সার্বিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা
নিশ্চিত হবে না।
যদি কোন মহিলা মাহরাম ছাড়া হজ করে, তাহলে তা আদায় হবে বটে। কিন্তু মাহরাম ছাড়া
সফরের কারণে সে গুনাহগার হবে। কেননা মহিলাদের সাথে মাহরাম থাকা হজ ফরয হওয়ার শর্ত।
আদায় হওয়ার শর্ত নয়।