• ৫৭০ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) - এর জন্ম: মহানবী (সাঃ) সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের আরবি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ জন্মগ্রহন করেন।
• ৫৭৭ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মা আমিনার মৃত্যু: আমিনা বিনতে ওহাব (আরবি: آمنة بنت وهب ) মৃত্যু ৫৭৭ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন ইসলামের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ এর মাতা। মাত্র ৬ বছর বয়সে মা আমেনা কে হারান আমাদের প্রিয় নবী।
• ৫৭৮ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দাদার মৃত্যু
তাঁর মাতা আমিনার মৃত্যু এর পর পিতামহ ‘আব্দুল মুত্তালিব তাঁর লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পিতামহ ‘আব্দুল মুত্তালিবের স্নেহ তিনি বেশি দিন ভোগ করতে পারেননি। মহানবী (সাঃ) এর দাদা আবদুল মুত্তালিব ইন্তেকাল করেন ৫৭৮ খ্রিষ্টাব্দে যখন হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর।
• ৫৯৫ হযরত খাদিজা (রাঃ) এর সাথে পরিচয় এবং বিবাহ: তিনি ছিলেন মক্কার একজন ধনাঢ্য ও সম্ভ্রান্ত মহিলা। তার বয়স যখন ৪০, তখন ২৫ বৎসর বয়সী মুহাম্মদের সঙ্গে তার বিবাহ হয়েছিল। মুহাম্মদের সকল সন্তান তার গর্ভে জন্ম লাভ করে। তার জীবদ্দশায় মুহাম্মদ আর কোন বিয়ে করেন নি। তাঁকে মক্কার জান্নাতুল মুয়াল্লা নামীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
• ৬১০ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রথম প্রকাশ: ৪০ বছর বয়সে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়তপ্রাপ্ত হন (৬১০ খ্রি.) এবং হেরা পর্বতের গুহায় তার কাছে প্রথম ওহী নাজিল হয়।
• ৬১৩ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইসলামের উন্মুক্ত দাওয়াত: তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেওয়ার পর মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করেন। এ ধরনের প্রচারের সূচনাটা বেশ নাটকীয় ছিল। মুহাম্মাদ সাফা পর্বতের উপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সকলকে সমবেত করেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, ""আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসুল""।
• ৬১৭ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্র বয়কট: এভাবে ইসলাম যখন শ্লথ গতিতে এগিয়ে চলছিল তখন মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মাদ ও তার অনুসারী সহ বনু হাশিম গোত্রকে একঘরে ও অবরোধ করে। তিন বছর অবরুদ্ধ থাকার পর তারা মুক্তি পায়।
• ৬২০ মাইরাজের যাত্রা / তায়েফের যাত্রা: ইসলামী ভাষ্যমতে মুহাম্মাদ এক রাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান; এই ভ্রমণ ইসলামে ইসরা নামে পরিচিত। পবিত্র হাদিস শরীফ ও সাহাবা-আজমাঈ'নদের বর্ণনানুযায়ী, মসজিদুল আকসা থেকে তিনি বুরাক (একটি ঐশ্বরিক বাহন বিশেষ)'এ করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন এবং এ সময় তিনি বেহেশ্ত ও দোজখ অবলোকন করেন এবং ইব্রাহিম, মূসা ও ঈসা নবীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই যাত্রা মুসলমানদের কাছে মি'রাজ নামে পরিচিত।
• ৬২১ আকাবার প্রথম অঙ্গীকার: ৬২১ খ্রিষ্টাব্দে (নবুয়তের দ্বাদশ বছরে) মুহাম্মদ(সঃ) হজের সময়ে মদিনা থেকে আগত একদল লোকের সাথে সাক্ষাত করলেন ।এই দলের ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জনই ছিলো মদিনার উল্লেখযোগ্য গোত্র বনু খাযরাজ ও বনু আউস গোত্রের লোক। তারা মিনার কাছে আকাবা উপত্যকায় উপস্থিত হয়ে রাসুলের নিকট ইসলামের শপথ বাক্য পাঠ করেন। শপথনামা।
• আমরা একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করব।
• আমরা ব্যভিচারে লিপ্ত হব না।
• আমরা চুরি-ডাকাতি বা কোনোরূপ পরস্ব আত্মসাৎ করব না।
• আমরা সন্তান হত্যা বা বলিদান করব না।
• কারও প্রতি মিথ্যা অপবাদ বা দোষারোপ করব না।
• প্রত্যেক সৎকাজে আল্লাহর রাসুলকে মেনে চলব এবং কোনো ন্যায় কাজে তার অবাধ্য হব না।
• নবদীক্ষিত মদিনাবাসির এই শপথ বা বাইয়াতকে আল আকাবার প্রথম শপথ বা বাইয়াতে আকাবা উলা নামে পরিচিত
• ৬২২ আকাবার দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি ও ইয়াত্রিবিতে দাওয়াত: আল-আকাবার প্রথম শপথের পরবর্তী বছর (৬২২ খ্রি.) মদিনা থেকে আরও ৭৩ জন লোক এসে হজরত (সা.)-এর সঙ্গে দেখা করলেন এবং তাদের দেশে যাওয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানালেন। তারা ধর্মপ্রচারে হজরতের সব ধরনের সাহায্য করতে এবং ইসলামকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন হলে যুদ্ধ করতে প্রতিশ্রুতি দিলেন। এটাই আল-আকাবার দ্বিতীয় শপথ। ইয়াসরিবের মুসলমানদের শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইতিপূর্বে প্রেরিত মুসাবও এ দলের সঙ্গে এসেছিলেন। তিনি হজরতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মদিনায় ইসলামের দ্রুত প্রসারের কথা জানালেন।
• ৬২২ ইহুদীদের সাথে ভ্রাতৃত্ব / চুক্তি: ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা নগরীতে হিজরত করেন। এসময় সেখানে বসবাসরত বনু আওস এবং বনু খাজরাজ সম্প্রদায় দুটির মধ্যে ছিল গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ।[২] তাই কলহে লিপ্ত এ দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি স্থাপন ও মদিনায় বসবাসরত সকল গোত্রের মধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৪৭ ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে মদিনার সনদ নামে পরিচিত
• ৬২৩ কিবলার পরিবর্তন: মসজিদ আল কিবলাতাইন (المسجد القبلتین) (দুই কিবলার মসজিদ) সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত একটি মসজিদ। ঐতিহাসিক দিক থেকে এই মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নামাজ পড়ার সময় মুহাম্মদ (সা) এর কাছে কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশের ওহি আসে। এরপর তার সাথে জামাতে নামাজে দাঁড়ানো মুসল্লিরাও জেরুজালেম থেকে মক্কার দিকে ফিরে যায়। এ ঘটনা থেকে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। পূর্বে এই মসজিদে দুইটি মিহরাব ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদের পুনর্নির্মাণের সময় জেরুজালেমমুখী মিহরাব সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এটি পৃথিবীর প্রাচীন মসজিদগুলোর অন্যতম।
• ৬২৪ বদরের যুদ্ধ: বদরের যুদ্ধ (আরবি: غزوة بدر) ২ হিজরির ১৭ রমজান (১৭ মার্চ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ) মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে সংঘটিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে এটি প্রথম প্রধান যুদ্ধ। এতে জয়ের ফলে মুসলিমদের ক্ষমতা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পায়।
• ৬২৫ উহুদের যুদ্ধ: উহুদের যুদ্ধ (আরবি: غزوة أحد Ġazwat ‘Uḥud) ৩ হিজরির ৭ শাওয়াল (২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দ) উহুদ পর্বতের সংলগ্ন স্থানে সংঘটিত হয়। মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এই দুই পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন যথাক্রমে মুহাম্মাদ (সা) ও আবু সুফিয়ান। ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত প্রধান যুদ্ধসমূহের মধ্যে এটি দ্বিতীয়।
• ৬২৭ আহযাবের যুদ্ধ : খন্দকের যুদ্ধ (আরবি: غزوة الخندق, প্রতিবর্ণী. Ghazwah al-Khandaq) বা আহযাবের যুদ্ধ (আরবি: غزوة الاحزاب, প্রতিবর্ণী. Ghazwah al-Ahzab) ৫ হিজরিতে (৬২৭ খ্রিষ্টাব্দ) সংঘটিত হয়। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। জোট বাহিনীর সেনাসংখ্যা ছিল প্রায় ১০,০০০ এবং সেসাথে তাদের ৬০০ ঘোড়া ও কিছু উট ছিল। অন্যদিকে মদিনার বাহিনীতে সেনাসংখ্যা ছিল ৩,০০০। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়। এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসলাম পূর্বের চেয়ে আরো বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠে।
• ৬২৮ হুদাইবিয়ার সন্ধি / রাজার চিঠিপত্র: হুদাইবিয়ার সন্ধি (আরবি: صلح الحديبية), ষষ্ঠ হিজরীর জ্বিলকদ মাসে (মার্চের ৬২৮ খ্রীষ্টাব্দে) মদিনা শহরবাসী এবং কুরাইশ গোত্রের মধ্যে সম্পাদিত একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। এই সন্ধিটি একটি দশ বছর শান্তি প্রতিষ্ঠিত করে এবং মুহাম্মদ (সা.) তার জীবনের বিশ্রামের জন্য তীর্থের সময় মক্কার দিকে আসতে অনুমোদন করে।
• ৬৩০ মক্কা / তাবুক অভিযানে বিজয়: ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদ (সঃ) দশ হাজার সাহাবীর বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হলেন।সেদিন ছিল অষ্টম হিজরীর রমজান মাসের দশ তারিখ। বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ ছাড়া মোটামুটি বিনাপ্রতিরোধে মক্কা বিজিত হলো এবং মুহাম্মাদ (সঃ) বিজয়ীবেশে সেখানে প্রবেশ করলেন।
• ৬৩১ বিদায় হজ্জের ভাষণ : বিদায় হজ্জের ভাষণ ১০ম হিজরিতে অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে হজ্জ পালনকালে আরাফাতের ময়দানে ইসলাম ধর্মের শেষ রাসুল মুহাম্মাদ (স:) কর্তৃক প্রদত্ত খুৎবা বা ভাষণ। হজ্জ্বের দ্বিতীয় দিনে আরাফাতের মাঠে অবস্থানকালে অনুচ্চ জাবাল-এ-রাহমাত টিলার শীর্ষে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সমবেত মুসলমানদের উদ্দেশ্যে তিনি এই ভাষণ দিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ (স:) জীবিতকালে এটা শেষ ভাষণ ছিলো, তাই সচরাচর এটিকে বিদায় হজ্জ বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ইসলামের প্রকৃত মূল্যবোধ অনুযায়ী মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে এই ভাষণে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা ছিলো।
• ৬৩২ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইন্তেকাল: অবশেষে ৮ই জুন ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে রবিবারে বা ১১ হিজরি সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার দিন সন্ধ্যায় তিনি মদিনায় আয়িশার গৃহে মৃত্যুবরণ করেনএ সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।